ভূমিকা
ভারত, এক সময়ের ধর্মনিরপেক্ষতা ও সহাবস্থানের মডেল দেশ — আজ এক অস্থির, বিভক্ত ও উগ্র চেতনার মধ্যে দিয়ে পথ চলছে। এক সময় যেখানে হিন্দু-মুসলিম, শিখ-খ্রিস্টান সকলেই একসাথে বসবাস করতেন, আজ সেখানে পারস্পরিক অবিশ্বাস, বিদ্বেষ ও হিংসা ছড়িয়ে পড়ছে নীরব বিষের মতো। এই রূপান্তর কেবল সমাজের নয়, এটি দেশের রাজনৈতিক নৈতিকতারও এক ভয়াবহ অবক্ষয়ের পরিচায়ক।
এক সময়ের ভারত
স্বাধীনতা পরবর্তী ভারত ছিল একটি বহু ধর্ম, বহু ভাষা, বহু সংস্কৃতির উদার পরিসর। বিভিন্ন মতাদর্শের মানুষ সেখানে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করতেন। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু, মহাত্মা গান্ধী, ড. আবুল কালাম আজাদ, বিআর আম্বেদকর — এঁদের মতো নেতারা একটি উদার, মানবতাবাদী ভারতের স্বপ্ন দেখেছিলেন।
রাজনীতিতে তখন নৈতিকতা ও দায়িত্ববোধ ছিল অগ্রাধিকার। যদি কোনো মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির আভাসও পাওয়া যেত, তিনি নিজে থেকেই পদত্যাগ করতেন। দায়িত্বজ্ঞান ছিল সম্মানের প্রশ্ন।
বর্তমান বাস্তবতা
কিন্তু আজ, আমরা এমন এক ভারত দেখছি, যেখানে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ। সাম্প্রতিক ঘটনাটি তারই জ্বলন্ত প্রমাণ — বিহারে এক নিরীহ মুসলিম শিক্ষক, মানসুর আলম, বাড়ি ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন, এবং অভিযোগ উঠেছে চরমপন্থী হিন্দুত্ববাদীদের দিকে।
এই ঘটনা শুধু একটি হত্যাকাণ্ড নয়, এটি একটি মূল্যবোধের মৃত্যু। আজ যারা ঘৃণা ছড়ায়, যারা ধর্মের নামে অস্ত্র তোলে — তারা অনেক সময় প্রশাসনের নীরব সমর্থন পায়। এর ফলেই সমাজে ভয়, ঘৃণা ও অনিশ্চয়তা বাড়ছে।
রাজনীতির নৈতিক পতন
বর্তমান ভারতের রাজনীতিতে আত্মসমালোচনার জায়গা নেই বললেই চলে। যেখানে এক সময় নেতারা জনসেবার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতেন, আজ ক্ষমতা ধরে রাখাই মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক ভাষা আজ বিষাক্ত, এবং অনেক সময় তা সমাজে বিভেদ সৃষ্টি করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
সমাপ্তি: আমাদের করণীয়
এখন প্রশ্ন, আমরা কী করব?
আমরা যদি সত্যিই একটি মানবিক, সহনশীল, এবং উদার ভারত গড়ে তুলতে চাই, তবে আমাদেরকে ঘৃণার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে — শিক্ষা, সহনশীলতা ও বিবেকের আলো নিয়ে। সমাজে যারা ঘৃণা ছড়ায়, তাদের মুখোশ খুলে দিতে হবে।
একটি দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ হয় তার নাগরিকদের মানবিকতা, যুক্তিবোধ এবং প্রতিবাদ করার সাহসের মাধ্যমে।